ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার ফুরসন্দি গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে গুরুতর দুজন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফুরসন্দি গ্রামের বিএনপি নেতা শাহাবুর মোল্লার সমর্থক আল-আমিনের সঙ্গে বিএনপি নেতা জাহিদ বিশ্বাসের সমর্থক ফিরোজের পারিবারিক কলহ বাধে। পরে পারিবারিক কলহ রাজনৈতিক গ্রুপিং সংঘর্ষে পরিণত হয়। এসময় দু’পক্ষের লোকজন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয় পড়ে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এসময় ২টি বাড়িতে ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ফুরসন্দি গ্রামের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা শাহাবুর মোল্লা ও জাহিদ বিশ্বাসের সমর্থকদের মাঝে বিরোধ চলে আসছিল। শাহাবুর মোল্লার দলীয় পদ নেই, তবে তিনি বিএনপির প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। অপর গ্রুপের জাহিদ বিশ্বাস ফুরসন্দি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক। তবে ৫ আগস্টের পরে ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতাদের নিজের গ্রুপে টেনে নেন শাহাবুর মোল্লা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্টজেলা বিএনপির কার্যালয় ও বিএনপি সভাপতি এমএ মজিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সেই মামলার আসামি ফুরসন্দি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওহাব মোল্লা, আওয়ামী লীগ কর্মী ইমরোজ, মজিদ মোল্লা, আক্তার মোল্লা বিএনপি নেতা শাহাবুর মোল্লার সমর্থক। তিনি বলেন, ফুরসন্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস মন্ডল, ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুরকে নিজের গ্রুপে টেনে নিয়েছেন বিএনপি নেতা শাহাবুর মোল্লা। আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে দল ভারী করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে এরা মারামারি ও সংঘর্ষ ঘটিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় গ্রামবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের লোকজন আগের মতোই মারামারি, সংঘর্ষ ও হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি নেতা শাহাবুরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এসব আওয়ামী লীগ নেতাদের দৌরাত্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। ফুরসন্দি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদ বিশ্বাস বলেন, শাহাবুর মোল্লার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেকেই যোগ দিয়েছে। এরা সব ৫ আগস্টের পরের বিএনপি। বিএনপি করা তো দোষের না, একজন আওয়ামী লীগ থেকে বা অন্য দল থেকে এসে বিএনপি করতেই পারে। কিন্তু, বিএনপিতে এসে মারামারি সংঘর্ষ করার তো কোনো সুযোগ থাকা উচিত না। আওয়ামী লীগের লোকজন সব এখন ৫ আগস্টের পরের বিএনপি। তারাই এসব ঝামেলা করছে। শাহাবুর মোল্লার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার সমর্থক, ফুরসন্দি ইউপি সদস্য ওহাব মোল্লা বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার। চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ করে। চেয়ারম্যান কাজে ডাকলে না যেয়ে তো উপায় থাকে না। আমার চেয়ে বড় বিএনপি ফুরসন্দিতে একটাও নেই। এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংঘর্ষের বিষয়ে ?ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ফুরসন্দি ইউনিয়নের হুদা গ্রামের পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সামাজিক বিরোধের সূত্রধরে রাজনৈতিক দুটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বলে আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata